
প্রতিবেদক: Md. Alak Hossain | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 30 Jun 2025, 7:00 AM

মুরাদনগরে ধর্ষণের নেপথ্য যা হয়েছিলো

মাহফুজ নান্টু
কুমিল্লার মুরাদনগরে ঘরে ঢুকে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। নির্যাতনের ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। শুরু হয় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা। ঘটনার দু'দিন পর রাজধানীর সায়দাবাদ থেকে ঘটনার প্রধান আসামীসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গেলো বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউয়িনের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ফজর আলী (৩৮) বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামের পুর্বপাড়ার শহীদ মিয়ার ছেলে। সেদিন রাতে ভুক্তভোগীর ঘরে ঢুকে ধর্ষণের ঘটনায় স্থানীয় লোকজন অভিযুক্ত ফজর আলীকে আটক করে মারধর করলেও সেখান থেকে পালিয়ে যায় সে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন ভুক্তভোগী ওই নারীকে মারধর ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। পরদিন শুক্রবার ফজর আলীকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী। এর প্রেক্ষিতে, রোববার ভোর ৫টার দিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে প্রধান আসামি ফজর আলীকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে অনিক, সুমন, রমজান ও বাবু নামে আরো চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সরেজমিনে মুরাদনগর উপজেলার পাচকিত্তা গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, গ্রামজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ। তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রউফ জানান, সেদিন তাকে স্থানীয়রা ঘটনা সর্ম্পকে জানান। আবদুর রউফ বলেন, ফজর আলী খারাপ প্রকৃতির লোক। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সে দলের হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আবদুর রউফ বলেন, এটা ঠিক হয় নি। তালেব হোসেন নামে স্থানীয় একজন জানান, ফজর আলী নিয়মিত জুয়া খেলে। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, তার স্বামী প্রবাসে। ফজর আলীর সাথে তার পাওনা টাকা নিয়ে সর্ম্পক হয়। ঘটনার দিন ফজর আলী তার ঘরে আসেন। এসে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দেখতে চান। ফজর আলী ওই নারীর হাত থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ফজর আলীর পরিবারের কাছে বিচার দেন ভুক্তভোগী নারী। পরে গেলো বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির সবাই একটি অনুষ্ঠানে গেলে রাত ১১ টার দিকে ফজর আলী ওই ভুক্তভোগীর ঘরে আসেন। এ সময় অসংলগ্ন অবস্থায় তাদেরকে স্থানীয়রা আটক করে মারধর করে।
ভুক্তভুগী ওই নারী জানান, ফজর আলী যখন তার ঘরে প্রবেশ করে, তখন ফজর আলীর ছোট ভাই শাহ পরান মোবাইল ফোনে এলাকার যুবকদের ওই ঘরে এসে তাদের আটক ও ভিডিও ধারণের কথা বলে। এ সময় স্থানীয়রা এসে ফজর আলী ও ওই নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করে। পরে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়।
ফজর আলী কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত তা নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। তবে পুলিশ বলছে আগে সে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত তা জানা নেই। আসামী ফজর আলীকে কুমিল্লা পুলিশ লাইনস হাসপাতালে রাখা হয়েছে। মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান জানান, ফজর আলী আগে আওয়ামী লীগ করতো। এখন কোন দলের রাজনীতির সাথে জড়িত তা তিনি জানেন না। আলোচিত এ ঘটনার পর পুলিশ ফজর আলীসহ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধে ৪ জনকে গ্রেফতার করে।
এদিকে গণমাধ্যমেসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত অভিযুক্ত ফজর আলীকে বিএনপি নেতা বলে প্রচার করায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি। অপপ্রচারে প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি। রোববার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর একটি রেস্তোরায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কামাল উদ্দিন ভুইয়া। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতারা দাবী করেন অভিযুক্ত ফজর আলী মুরাদনগর উপজেলার ১১ নং দক্ষিন রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়ার বডিগার্ড হিসেবে এলাকায় পরিচিত। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করা ফজর আলীর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোল্লা মুজিবুল হক, যুগ্ম আহবায়ক নজরুল ইসলাম,মুরাদনগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দুলাল দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক দয়ানন্দ ঠাকুর, উপজেলা মহিলা দলের আহবায়ক কাজী তাহমিনা আক্তার, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহববায়ক রায়হান উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার নাজির আহম্মাদ খাঁন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মুরাদনগর উপজেলায় একজন নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক জনরোষ তৈরি হয় এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি ওঠে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী নিজে বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ফজর আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। এরপর পুলিশের একটি টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রোববার বৈারে অভিযান চালিয়ে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে আসামী ফজর আলীকে পুলিশ লাইনস হাসপাতালে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে। চিকিৎসকের ছাড়পত্র পেলে তাকে আদালতে নেয়া হবে৷
এদিকে রোববার বিকেলে অভিযুক্ত ফজর আলীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মানবন্ধন করে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম ও ছাত্র ফ্রন্ট। বিবিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি কুমিল্লাবাসীর দাবী মর্মস্পর্শী এই ঘটনায় রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় পরিচয়কে বড় করে না দেখে অপরাধীকে তার অপরাধ অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হউক।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

বাঞ্ছারামপুরে ২ সন্তানের জননী গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযো...
বাঞ্ছারামপুর প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ূবপুর ইউনিয়নের কানাইনগরে রিপন মিয়ার...

আলমগীর হোসেন চান্দলা বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক...
আনোয়ারুল ইসলামকুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দক্ষিণ চান্দলা বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিস...

বুড়িচংয়ে ডাক্তার মীর হোসেনের মায়ের ইন্তেকাল
বুড়িচং প্রতিনিধিকুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও...

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা আটক
নিজস্ব প্রতিনিধি,দাউদকান্দিকুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বৈষম্যবিরোধী আ...

দাউদকান্দিতে নদী পুনরুদ্ধার বর্জ্যঅপসারণ ও ব্যবস্থাপনা শীর্...
নিজস্ব প্রতিনিধি,দাউদকান্দিকুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শি...

বাঞ্ছারামপুরে শত বছরের পুরনো কবুতরের হাটে বিক্রি হয় লাখ টাক...
ফয়সল আহমেদ খানরোববার আসলেই হাট বসে। সে-ই শত বর্ষ আগে থেকে। এদত অঞ্চলের মানুষ হাটটিকে ঘিরে ব্যবসায়িক...
