
প্রতিবেদক: Alak Hossain | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 4 Aug 2025, 11:30 AM

মুরাদনগরে ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ

বেলাল উদ্দিন আহাম্মদ
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় প্রায় প্রতি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস জ্বর। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। আক্রান্ত হচ্ছে ছোট-বড় সবাই। তবে বেশি আক্রন্ত হচ্ছে শিশুরা। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বরের সঙ্গে শরীরে প্রচ- ব্যথাসহ দেখা দিচ্ছে নানা উপসর্গ। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক, শ্বাসকষ্টজনিত রোগী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী ও বহির্বিভাগে ৬৫০-৭০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্ত হওয়া অসংখ্য রোগী হাসপাতালে বেড না পাওয়ায় অনেকেই হাসপাতালের মেঝেতে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন আবার অনেকেই বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, সকাল থেকেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের সামনে দীর্ঘ লাইন। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত অনেক শিশুকে চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন অভিভাবকরা। পাশাপাশি বয়স্কদেরকেও নিয়ে এসেছে পরিবারের লোকজন। বিশেষ করে শিশু ডাক্তারের চেম্বারের বাহিরে অভিভাবকরা তাদের শিশুদেরকে নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রতিদিন ১৭০-১৮০ জন শিশু রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন। জরুরি বিভাগে আসা শিশুদের পরিস্থিতি বুঝে ভর্তি দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ১৮ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি নেই। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। রোগীদের অধিকাংশই ভাইরাস জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্সরা জানান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে শিশু ওয়ার্ডে ১৮ শয্যার বিপরীতে ভর্তি হয়েছে ২৫ জন। এরমধ্যে বেশিরভাগ শিশুই জ্বর, সর্দি, কাশি, নিমোনিয়া ও ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত। মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্সরা জানান, মহিলা ওয়ার্ডে ১৭ শয্যার বিপরীতে ভর্তি হয়েছে ৩৮ জন এবং পুরুষ ওয়ার্ডে ১৫ শয্যার বিপরীতে ভর্তি হয়েছে ৩১ জন। ধারন ক্ষমতার চেয়েও বেশী রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে।
এক বছরের বাচ্চাকে নিয়ে বহির্বিভাগে লাইনে দাঁড়িয়ে ভুবনঘর গ্রামের শারমিন আক্তার বলেন, গত ছয় দিন ধরে বাচ্চার জ্বর-ঠান্ডা। ফার্মেসি থেকে ঔষধ খাইয়েছি। সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি ডাক্তার দেখাতে।
১০ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নিমাই কান্দি গ্রামের সাথী আক্তার বলেন, তিন দিন ধরে বাচ্চার জ্বর ঠান্ডা কাশি। এখন ডাক্তার দেখানোর জন্য অপেক্ষা করতেছি।
শুশুন্ডা গ্রাম থেকে তিন বছরের শিশু সন্তান আজমাইনকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছেন পিতা সোহেল মিয়া। তিনি বলেন, তিন দিন পূর্বে জ্বর দেখা দিয়েছে। বাসায় বাচ্চাকে প্যারাসিটামল সিরাপ খাইয়েছি। জ্বর কমানোর জন্য ডোজও ব্যবহার করেছি। কিন্তু এখনো সুস্থ হয়নি। দিনে ভালো থাকলেও রাতে জ্বর আসে। সেজন্য ডাক্তার দেখাতে নিয়ে আসলাম।
তিন বছরের ছেলে জুনায়েদকে নিয়ে দুই দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পুড়াকান্দি গ্রামের নুরজাহান বেগম। কথা হলে তিনি জানান, তার ছেলে কিছুদিন ধরে জ্বর, বমি ও পাতলা পায়খানায় ভুগছিল। হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার ভর্তি দিয়েছেন।
মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি মাধবপুর গ্রামের নাসিমা আক্তার (৩০) বলেন, প্রথমে জ্বর আসে। পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তন ও বিভিন্ন কারনে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। আক্রন্তদের মধ্যে শিশু ও বয়ষ্কদের সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে আসা শিশুদের বেশিরভাগই জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়ায় ভুগছে। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, গরমে শিশু ও বয়ষ্করা ঘেমে শরীর ভিজে যায়। এসময় ভেতজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। শিশুদেরকে ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। ঘরের ভিতর যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে শিশুদেরকে দূরে রাখতে হবে। বাহিরে বের হলে শিশু থেকে বয়ষ্ক সকলকেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করতে হবে। পানির পাশাপাশি নরম ও তরল খাবার বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, এসময়টাতে নবজাতকরা বেশি ঝুকিতে থাকে। এর মধ্যে যারা জ্বর-ঠান্ডা-কাশিতে ভুগে তারা শুরুতেই সিভিয়ার মাত্রায় পৌছে যায়। তাই নবজাতকের ব্যপারে খুব সচেতন থাকতে হবে। মায়েরা নবজাতকদেরকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। মায়েরা যেন অসুস্থ না হয় সে ব্যপারে সতর্ক থাকতে হবে। শিশুরা অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথাও বলেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক জানান, এখন বর্ষাকাল এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে মানুষের এই ভাইরাস জ্বরের রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন জরুরী বিভাগ ও বহির্বিভাগে শত শত রোগী আসছেন। রোগীদের বেশিরভাগ ভাইরাস জনিত ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের পরিস্থিতি বুঝে ভর্তি এবং বহির্বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও আমরা সর্বাত্মকভাবে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

তিতাসে নিহত শীর্ষসন্ত্রাসী মামুনের দুই সহযোগী ইয়াবাসহ আটক
নাজমুল করিম ফারুক কুমিল্লার তিতাসের শোলাকান্দি গ্রামের নিহত শীর্ষসন্ত্রাসী মামুনের দুই সহযোগীকে আটক...

মুরাদনগরে অনুমতি ছাড়া এলপিজি গ্যাস বিক্রির অপরাধে ২ লাখ টাক...
বেলাল উদ্দিন আহাম্মদকুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় বিনা অনুমতিতে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তি করে বাজার...

জুলাই আন্দোলনে আহত দেবিদ্বারের আবু বকর এক বছরেও স্বাভাবিক জী...
মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগরকুমিল্লার দেবিদ্বারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র হামলার শিকার হয়ে এক বছর ধরে বাক...

কুমিল্লায় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিএনপির মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সদর দক্ষিণকুমিল্লা -১০ সংসদীয় আসন ভেঙ্গে ত্রিখন্ডিত করে আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিব...

বাঞ্ছারামপুরের সেই কোটিপতি কাজীর বিরুদ্ধে এবার নারী কেলেংকার...
ফয়সল আহমেদ খানব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের কাজী হেলাল উদ্দিন...

বরুড়ায় কৃতি শিক্ষার্থীদের ফলজ গাছের চারা বিতরণ
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম"পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি" এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উপজেলাপ...
