
প্রতিবেদক: Alak Hossain | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 18 Jun 2025, 12:53 AM

অবহেলায় বাঁশ-বেত শিল্প

আনোয়ারুল ইসলাম
এক সময়ের সমৃদ্ধ গ্রামীণ কুটির শিল্প বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি সামগ্রী আজ বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সহজলভ্য হয়ে ওঠা প্লাস্টিকের পণ্য বাঁশ-বেতের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে আজ কোণঠাসা করে ফেলেছে। চাহিদা কমে যাওয়া, কাঁচামালের সংকট আর ন্যায্যমূল্যের অভাবে ধুঁকতে থাকা এই শিল্প থেকে অধিকাংশ কারিগর পেশা বদল করে নিয়েছেন নতুন জীবনের পথ। তবে এখনো আশার আলো হয়ে আছেন একজন—৫৫ বছর বয়সী রাধা চন্দ্র নম।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকার বাসিন্দা রাধা চন্দ্র নম। পূর্বপুরুষ থেকে পাওয়া এই পেশাকে ভালোবেসে এখনো আঁকড়ে ধরে রেখেছেন তিনি। বাবা শ্রীধাম চন্দ্র নমের কাছ থেকে শিখেছিলেন বাঁশ-বেতের কারুকাজ। এখন সেই পেশাই তাঁর জীবনের শেষ আশ্রয়।
সম্প্রতি রাধা চন্দ্র নমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মঞ্জু রানী নম দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া সামগ্রী তৈরিতে। টোকা, চালুনি, হাতপাখা, ঝুড়ি কিংবা ধান রাখার কৌটা—সবই তৈরি হচ্ছে তাদের হাতে। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, এগুলোর আর তেমন কোনো বাজার নেই।
রাধা চন্দ্র নম বলেন, “এটা আমাদের বংশগত পেশা। বাবার হাত ধরে কাজ শিখেছি। একসময় এই পেশা দিয়ে সংসার চলতো, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা হতো। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। কাঁচামালের দাম বেশি, বিক্রি কম—তাই আয়ও কমে গেছে। তবু এতদিনের অভ্যাস আর ভালোবাসা ছিঁড়ে ফেলতে পারিনি।”
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে বসে কাজ করতাম। তখন মানুষ আমাদের তৈরি জিনিসের জন্য অপেক্ষা করতো। এখন আমাদের সন্তানরা বিশ্বাসই করে না, এই পেশা দিয়ে একসময় কদর পাওয়া যেত।”
বাঁশ-বেত শিল্পের বর্তমান দুরবস্থার বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, “একসময় গ্রামে প্রচুর বাঁশ পাওয়া যেত। এখন মানুষের ঘরবাড়ি বেড়েছে, ফলে বাঁশের ঝাড় কমে গেছে। ফলে কাঁচামাল সংকট তৈরি হয়েছে। আবার, বাজারে এখন সহজলভ্য দামে প্লাস্টিক পণ্য পাওয়া যায়। তাই বাঁশ-বেতের পণ্যের প্রতি আগ্রহ কমেছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বাঁশ-বেতের পণ্য পরিবেশবান্ধব। এই শিল্পটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। সরকারের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শিল্পটি আবার জেগে উঠতে পারে।”
আজ যেখানে প্রাচীন কুটিরশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে, সেখানে রাধা চন্দ্র নমদের মতো মানুষেরা এখনো আশার আলো। তারা শুধু শিল্প টিকিয়ে রাখেননি, টিকিয়ে রেখেছেন এক বিশাল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

তিতাসে নিহত শীর্ষসন্ত্রাসী মামুনের দুই সহযোগী ইয়াবাসহ আটক
নাজমুল করিম ফারুক কুমিল্লার তিতাসের শোলাকান্দি গ্রামের নিহত শীর্ষসন্ত্রাসী মামুনের দুই সহযোগীকে আটক...

মুরাদনগরে অনুমতি ছাড়া এলপিজি গ্যাস বিক্রির অপরাধে ২ লাখ টাক...
বেলাল উদ্দিন আহাম্মদকুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় বিনা অনুমতিতে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তি করে বাজার...

জুলাই আন্দোলনে আহত দেবিদ্বারের আবু বকর এক বছরেও স্বাভাবিক জী...
মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগরকুমিল্লার দেবিদ্বারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র হামলার শিকার হয়ে এক বছর ধরে বাক...

কুমিল্লায় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিএনপির মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সদর দক্ষিণকুমিল্লা -১০ সংসদীয় আসন ভেঙ্গে ত্রিখন্ডিত করে আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিব...

বাঞ্ছারামপুরের সেই কোটিপতি কাজীর বিরুদ্ধে এবার নারী কেলেংকার...
ফয়সল আহমেদ খানব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের কাজী হেলাল উদ্দিন...

বরুড়ায় কৃতি শিক্ষার্থীদের ফলজ গাছের চারা বিতরণ
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম"পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি" এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উপজেলাপ...
