
প্রতিবেদক: Alak Hossain | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 16 Jun 2025, 1:13 AM

চৌদ্দগ্রামে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কৃষকদের অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

এমরান হোসেন বাপ্পি
সরকার মাঠ পর্যায়ে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদেরকে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তুলতে এবং কৃষির প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে বিপুল পরিমান অর্থ বরাদ্দ করেছে। অথচ সেই পুষ্টি বাগানের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জোবায়ের আহমেদ। পুষ্টি বাগানগুলো তৈরি না করে বরাদ্দের সিংহ ভাগ অর্থই তিনি আত্মসাৎ করেছেন। এ সংক্রান্ত উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। এছাড়াও চলতি অর্থ বছরের মাঠে চাষযোগ্য বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন হাইব্রিড জাতের বীজের নগদ অর্থ ও সারের টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গত বছরের (২০২৪ সালের) ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী কৃষকের প্রণোদনার ১২ হাজার কেজি সার ও হাইব্রিড জাতের ধানের কয়েক লাখ টাকাও আত্মসাৎ করেছেন এই কর্মকর্তা। কৃষকের টাকা আত্মসাৎ করে তিনি কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে নিজ অফিসে আধুনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও সজ্জিত করেন এবং শীতল হাওয়ার জন্য লাগিয়েছেন দামি এয়ার কন্ডিশন (এসি)।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে চলতি অর্থ বছরে কৃষি মন্ত্রণালয় পারিবারিক পুষ্টি বাগানের জন্য উপজেলা পর্যায়ে বিপুল পরিমান অর্থ বরাদ্দ দেন। এর মধ্যে এবার নতুন ২৪১টি পুষ্টি বাগানের জন্য প্রতিটি ৭ হাজার করে সর্বমোট ১৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা বরাদ্দ করে। অথচ এই কর্মকর্তা ২৪১টি পুষ্টি বাগানের ৫ হাজার ৭শ টাকা করে বিভিন্ন ধরনের বীজ ও সার প্রদান করে বাকী ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও পুরাতন ৩৫০টি পুষ্টি বাগান সংস্কারের জন্য সরকার কৃষক প্রতি ৫ হাজার টাকা করে মোট ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়। কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের আহমেদ ৩৫০ জন কৃষককে মাত্র নগদ ৫শ টাকা করে দিয়ে ১৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
কৃষি অফিস সুত্রে আরও জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ৬ অক্টোবর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামার বাড়ী, কুমিল্লা স্মারক নং- ১২.১৭.১৯০০.০৪১.৩৮.১৭০.২৪-১৯৩২(৪৫) এর মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে মাঠে চাষযোগ্য বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের শীতকালীন সবজির বীজ, সার ও নগদ অর্থ সহায়তা বাবদ ১৫শ কৃষকের জন্য ৪৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করেন। এতে করে প্রতি কৃষকের জন্য ৩ হাজার ২শত ১০ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়। যার মধ্যে ২৭ লাখ টাকার বীজ ক্রয়ের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। আর অনলাইনের মাধ্যমে প্রতি কৃষককে ১ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। মরিচ, টমেটো, লাউ, ব্রুকলি, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বীজের জন্য জন প্রতি ১৮শ টাকা বরাদ্দ করেন। ফলন ভালো হওয়ার জন্য কৃষক প্রতি ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বরাদ্দ করেন। পরিপত্রে ২৭ লাখ টাকার বীজ ক্রয়ের জন্য একটি ক্রয় কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও এই কর্মকর্তা কোন ক্রয় কমিটি গঠন করেননি। এছাড়াও বিএডিসি কর্তৃক প্রয়োজনীয় সার ব্যবস্থা করতে না পারলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে বিএডিসির ডিলারদের থেকে বীজ ক্রয়ের নির্দেশনা থাকলেও এই কর্মকর্তা উপজেলার ১৮টি বিএডিসির বীজের ডিলার থেকে বীজ ক্রয় না করে খোলা বাজার থেকে নি¤œ মানের বীজ ক্রয় করে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিজের পকেটে রেখে দেন। যার কারণে বিগত শীতকালীন মৌসুমে প্রণোদনার এ সবজি চাষ আশানুরুপ ফলেনি। এছাড়াও গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় এর উপ-পরিচালক (বীজ), কুমিল্লা কার্যালয়ের স্মারক নং- ১২.০৬.১৯০০.২৭৫.৯৯.০০১.২৪-২১৮, তারিখ ০৫/০৯/২০২৪ মূলে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মৌসুমে বাস্তবায়িত রোপা আমন ধানের উফশী জাতের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬ হাজার কৃষকের ধানের বীজ ক্রয়ের জন্য ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করেন। এতে করে প্রতিজন কৃষককে ৫ কেজি করে ব্রি-ধান ৭৫, ব্রি-ধান ১৭ এবং বিনা ধান-১৭ জাতের ধানের বীজ ক্রয় করে বিতরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সরকারি হিসেবে প্রতিকেজি ধানের জন্য ৫৫ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি খোলা বাজার থেকে নি¤œমানের এই সকল ধানের বীজ ৪০ টাকা করে ক্রয় করেছেন। এছাড়াও উপ-পরিচালকের কার্যলায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুমিল্লা এর স্মারক নং- ১২.১৭.১৯০০.০৪১.৩৮.১৬৬.২৪-১৭০৭, তারিখ: ০৩/০৯/২০২৪ইং মূলে চলতি অর্থ বছরের সাম্প্রতিক বন্যা ও পাহাড়ী ঢলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের খরিপ-২ মৌসুমে রোপা আমন ধানের উফশী জাতের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে বন্যায় ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া এবং আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ৬ হাজার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে ১০ কেজি ডিএডি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়ার জন্য নির্দেশনা থাকলেও তিনি সেখানে ৫ ে কেজি করে সার দিয়ে বাকী সারগুলো আত্মসাৎ করেন। যার অর্থের পরিমান ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
নাম গোপন রাখার শর্তে একাধিক কৃষক বলেন, আমাদেরকে মাঝে-মধ্যে কৃষি অফিস থেকে কিছু সার ও বীজ প্রদান করা হয়। তবে প্রতি জনের কি বরাদ্দ আসে তা আমরা জানতে পারি না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শীতকালীন সবজি চাষি জানান, এই বছরে শীতকালের জন্য বিভিন্ন জাতের যে বীজ আমাদেরকে প্রদান করা হয়েছে তা অত্যান্ত নি¤œ মানের, ফলনও ভালো হয়নি।
সরেজমিনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জোবায়ের আহমেদের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে তিনি আধুনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইন করিয়েছেন। লাগিয়েছেন ২ টন ওজনের একটি এসি। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই বিলাসিতার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কোন অর্থ বরাদ্দ করেননি। স্থানীয় সূত্রের দাবী কৃষকের জন্য বরাদ্দের টাকা দিয়ে তিনি বিলাসিতা করছেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জোবায়ের আহমেদের বক্তব্য চাওয়া হলে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা ক্রয় এবং বরাদ্দ ইউএনও’র অনুমতি নিয়ে করেছি। আমি কোন দুর্নীতি বা অনিয়ম করিনি। নিজের অফিসের ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও এসির জন্য কোন বরাদ্দ এসেছে কিনা জানতে চাইলে এবিষয়ে তিনি কোন জবাব না দিয়ে মোবাইল সংযোগটি কেটে দেন।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

তিতাসে নিহত শীর্ষসন্ত্রাসী মামুনের দুই সহযোগী ইয়াবাসহ আটক
নাজমুল করিম ফারুক কুমিল্লার তিতাসের শোলাকান্দি গ্রামের নিহত শীর্ষসন্ত্রাসী মামুনের দুই সহযোগীকে আটক...

মুরাদনগরে অনুমতি ছাড়া এলপিজি গ্যাস বিক্রির অপরাধে ২ লাখ টাক...
বেলাল উদ্দিন আহাম্মদকুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় বিনা অনুমতিতে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তি করে বাজার...

জুলাই আন্দোলনে আহত দেবিদ্বারের আবু বকর এক বছরেও স্বাভাবিক জী...
মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগরকুমিল্লার দেবিদ্বারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র হামলার শিকার হয়ে এক বছর ধরে বাক...

কুমিল্লায় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিএনপির মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সদর দক্ষিণকুমিল্লা -১০ সংসদীয় আসন ভেঙ্গে ত্রিখন্ডিত করে আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিব...

বাঞ্ছারামপুরের সেই কোটিপতি কাজীর বিরুদ্ধে এবার নারী কেলেংকার...
ফয়সল আহমেদ খানব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের কাজী হেলাল উদ্দিন...

বরুড়ায় কৃতি শিক্ষার্থীদের ফলজ গাছের চারা বিতরণ
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম"পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি" এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উপজেলাপ...
