প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 16 Jul 2025, 12:03 PM
আর আসবো না’ বলে চলে গেলেন ভিক্টোরিয়ার অধ্যক্ষ
মাহফুজ
নান্টু
এক বুক অভিমান নিয়ে পদত্যাগের এক দফা দাবির মুখে পুলিশ প্রহরায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঞাকে। যাওয়ার সময় এক বুক অভিমান নিয়ে বলেন, ‘আর আসবো না’ এই ক্যাম্পাসে।
সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে পুলিশ ক্যাম্পাসে আন্দোলনস্থলে গিয়ে অধ্যক্ষকে উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দেন বলে জানিয়েছেন কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম। এর আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমাতুজ জোহরা ও সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল মালিক।
সরেজমিনে মঙ্গলবার ভিক্টোরিয়া কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজে আসেননি অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঞা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের দাবী পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঞা। গেলো সোমবার আসরের নামাজ পড়তে গিয়ে কলেজ মসজিদ থেকে ফেরার পথে দাবি পূরণের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আশানুরূপ কোন বক্তব্য না দিতে পারায় তাকে মসজিদে অবরুদ্ধ করা হয়।
এ সময় অধ্যক্ষের পদত্যাগের এক দফা দাবি তুলেন শিক্ষার্থীরা৷ এ সময় মসজিদেই অন্তত ৮ ঘন্টা অপেক্ষার পর পুলিশের সহযোগিতায় বের হয়ে যান অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঞা।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উপধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল মজিদ মঙ্গলবার দুপুরে জানান, ‘অধ্যক্ষ মহোদয় মঙ্গলবার কলেজে আসেননি। সোমবার রাতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে তিনি ‘আর আসবেন না’ বলে চলে যান। তবে পদত্যাগ করেন নি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো তুলেছে সেগুলো যৌক্তিক হলেও সময় সাপেক্ষ। এসব বিষয়ে খুব দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। অধ্যক্ষ চাইলেও দ্রুত এসব দাবি বাস্তবায়ন করতে পারতেন না।
উপাধ্যক্ষ আরো বলেন, ‘যৌক্তিক দাবি আদায়ের আন্দোলন হলেও এভাবে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়টি ঠিক হয় নি। এটি সারাদেশে একটি ভুল বার্তা দিবে। আমরা চাই ছাত্র শিক্ষক সবাই মিলে সুন্দর প্রতিষ্ঠান গড়তে।
এদিকে গত সপ্তাহ থেকেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবির বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও অধ্যক্ষের সাথে আলোচনা ও আন্দোলন করে আসছিলো। অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনায় আশ্বাসমূলক বক্তব্য ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পেয়ে মঙ্গলবার বিকালে অধ্যক্ষের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি জানান এবং দুই কার্যদিবস সময় দেন। সোমবার কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় বসেন। কিন্তু তারা অধ্যক্ষের কাছ থেকে কোন আশ্বাস না পেয়ে অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
শিক্ষার্থীদের দেওয়া ৯ দফা দাবিগুলো হচ্ছে, কলেজে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন, ডিগ্রি শাখার জন্য পৃথক ও আধুনিক ক্যাম্পাস স্থাপন, সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার, বহিরাগত, মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বাস ও মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু, আবাসিক হল ও আশপাশের হোটেল এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয় পানি, আধুনিক ওয়াশরুম এবং যুগোপযোগী শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় আলাদা ফান্ড গঠন, কলেজের সব ধরনের আয়-ব্যয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সোমবার দুপুরে দাবির বিষয়ে অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে আশ্বাসমূলক বক্তব্য ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পেয়ে সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সংলাপ ভেঙে বের হয়ে আসেন এবং ‘এক দফা এক দাবি, অধ্যক্ষের পদত্যাগ চাই’ ¯স্লোগান তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে তিনি (অধ্যক্ষ) মসজিদে আশ্রয় নিলে সেখানে তাঁকে রাতে উদ্ধার পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
এসময় অধ্যক্ষের পাশে অন্যান্য শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও ছিলেন। সোমবার রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল মালিক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ জোহরাসহ কয়েকজন কর্মকর্তা কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এসময় তারা শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
কুমিল্লা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ জোহরা জানান, আমরা পরিস্থিতির কথা শুনে কলেজে গিয়েছি। সেখানেঅনেক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে রাতে আন্দোলন করছিলো। আমরা তাদের সাথে কথা বলে দাবি আদায়ের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছি এবং সেসময় পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে অধ্যক্ষকে বাড়ি নিয়ে যায়।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের পদত্যগের দাবিতে বিকাল থেকে বিক্ষোভ করছিলেন। তবে রাতের দিকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা (পুলিশ) অধ্যক্ষকে রাত সোয়া ১১টার দিকে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দিয়েছি।
তবে রাতে এ বিষয়ে জানতে কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঞার ব্যক্তিগত নম্বরে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে উপাধ্যক্ষ জানিয়েছেন, এই অবস্থায় কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘিœত হবে না। এই বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে অবগত করা হয়েছে।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
যারা ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে আঁতাত করে তারা দলের শত্রু-মনিরুল...
নিজস্ব প্রতিবেদক, সদর দক্ষিণবিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা-৬ সংসদীয় আসনের বিএনপি মনোনীত প্র...
কুমিল্লায় মানবিক কুমিল্লার উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে স...
নিজস্ব প্রতিবেদককুমিল্লা নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এন.আর.ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে মানবিক কুম...
হাজী ইয়াছিনকে মনোনয়নের দাবীতে নগরীতে তৃণমূলের অবস্থান কর্মসূ...
নিজস্ব প্রতিবেদককুমিল্লা-৬ সদর আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের মনোনয়ন...
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের ৪৫ জন গ্রেফতার
মাহফুজ নান্টু কুমিল্লায় জননিরাপত্তা বিঘ্ন, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযো...
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা
মাসুদ রানা, কুমিল্লাগ্রামের মানুষের সেবা নেওয়ার একমাত্র ভরসা কমিউনিটি ক্লিনিক! শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলে...
চান্দিনার ড্রেজারে বালু উত্তোলন, ঝুঁকিতে রাস্তা
সোহেল রানা, চান্দিনাকুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার শুহিলপুর ইউনিয়নের শালীখা গ্রামে অবৈধভাবে পুকুরে ড্রেজ...