
প্রতিবেদক: Md. Alak Hossain | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 20 Jun 2025, 5:55 AM

‘‘আলাদিনের চেরাগে’’ বদলে গেছে জনস্বাস্থ্যের ড্রাফটম্যান চৌদ্দগ্রামের শাহিনের ভাগ্য

এমরান হোসেন বাপ্পি
নাম মো:শাহিন আলম। বয়স ৩২ বছর। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের তেলিহাটি গ্রামের জয়নাল আবেদীন ও রাবেয়া দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। পড়ালেখা শেষে সাবেক রেলপথ মন্ত্রী, চৌদ্দগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য মো: মুজিবুল হক মুজিবের বিশেষ সুপারিশে ২০১৮ সালের নভেম্বরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ড্রাফটম্যান হিসাবে মাত্র ২১ হাজার ৪৭০ টাকা বেতন স্কেলে বরুড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তরে যোগদান করেন। চাকুরিতে যোগদানের পরপরই খুলে যায় তার ভাগ্যের চাকা। পেয়ে যান রূপকথার আলাদিনের চেরাগ। চেরাগের ছোঁয়াতেই চাকরিতে যোগদানের মাত্র ৬ বছরে তিনি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার নামে ঢাকা-কক্সবাজার রোডে রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল স্লিপার কোচ। পণ্য পরিবহনের জন্য রয়েছে ১১টি ড্রাম ট্রাক, মাটি কাটার জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ১০টি এস্কেভেটর রয়েছে। ঢাকা ও কুমিল্লায় রয়েছে অন্তত ১০ কোটি টাকা মূল্যের জায়গা ও আধুনিক ফ্লাট বাড়ী। পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। যার পরিমান শত কোটি টাকারও উর্ধ্বে বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গত ২৪ মে অভিযুক্ত শাহিন আলমের নিজ গ্রাম তেলিহাটির বাড়ীতে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বিয়ের শুরুর দিকে জয়নাল আবেদীন ও রাবেয়া দম্পতি ছিলেন নিঃসন্তান। পরে পাশ্ববর্তী এক বাড়ী থেকে দরিদ্র এক দম্পতির একটিপুত্র শিশুকে দত্তক নেনজয়নাল আবেদীন। তার নাম রাখা হয় মনির হোসেন। এরপরই ওই দম্পত্তির ঘরে পর্যায়ক্রমে জন্মগ্রহণ করেন রফিক, শাহিন ও সোহেল রানা নামে ৩ পুত্র সন্তান।
স্থানীয় সুত্রে আরও জানা গেছে, জয়নাল আবেদীন এক সময় স্থানীয় কাদৈর বাজারে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাতেন। মাঠে-ঘাটে ফসলী কোন জায়গা জমিন ছিলো না তার। বাদাম বিক্রির লাভের টাকায় কোনোমতে জোড়াতালি দিয়েচলতো সংসার। এর মধ্যে সন্তানরা বড় হচ্ছিল। এদিকে শাহিন আলমের বড় ভাই রফিক ও ছোট ভাই সোহেল রানা ধার-দেনা করে সৌদিআরব চলে যান। শাহিন আলম পড়ালেখায় মেধার ছাপ রাখেন। ২০১৮ সালে তৎকালীনরেলপথ মন্ত্রী, আওয়ামীলীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের সুপারিশে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ড্রাফটম্যানেরচাকুরি পান তিনি। চাকুরিতে প্রথম যোগদান করেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তরে। এতেই খুলে যায় তার ভাগ্যের চাকা। পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। তারই ছোঁয়ায় রাতারাতি বনে যান বিপুল অর্থবিত্তের মালিক। বাবা জয়নাল আবেদীনের তেমন কোন জায়গা-সম্পত্তি না থাকলেও মাত্র এক বছরের মাথায় শাহিন আলম ৬ শতক জমি ক্রয় করেন। ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা খরচ করে ঐ জায়গার উপর নির্মাণ করেন একটি বিলাস-বহুল ডুপ্লেক্স বাড়ী। বরুড়ার নিজ কর্মস্থলে নানান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় শাহিন আলমকে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে জেলার লাকসাম উপজেলায় বদলি করা হয়। সেখানে জয়েন্ট করে তিনি হয়ে ওঠেন আরো বেপরোয়া। জড়িয়ে পড়েন নানানঅনিয়ম-দুর্নীতিতে।
তেলিহাটি গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, জয়নাল আবেদীনের ঘরে জন্ম নেওয়াদ্বিতীয় সন্তানশাহীন। তার দুই ভাই প্রবাসী।জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগদানের পর হঠাৎ রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যায় সে। ড্রাফটম্যানের পদবী ব্যবহার করে শাহিন আলম বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদারী কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এখন নিয়মিত অফিসেও যায় না সে। ঠিকাদারি ব্যবসাকে আরো সম্প্রসারণ করতে তার ছোট ভাই এবং নিকটতম এক আত্মীয়ের নামে পৃথক দুইটি ঠিকাদারী লাইসেন্স তৈরি করে। এই লাইসেন্সগুলো দিয়ে সরকারি চাকুরির প্রভাব খাটিয়ে শাহিন আলম কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ ভাগিয়ে নেয়। সে তার সকল অবৈধ সম্পদ রক্ষা এবং ঠিকাদারী কাজে সহযোগিতার জন্য দুই ভাইকে প্রবাস থেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ঠিকাদারীর সকল কাজ শাহিন আলম নিজেই দেখাশোনা করে। সরকারের নজরদারি থেকে বাঁচতে জন্য তাদেরকে দেশে এনে মাসিক বেতন দিয়ে থাকে।
গত ২৫ মে সরেজমিনে লাকসাম গিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৪ মার্চ তিনি সেখানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে যোগদান করেন। যোগদানের পরেই এই পদটিকে তিনি আলাদিনের চেরাগ হিসাবে ব্যবহার করেন। সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক এলজিইডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোহাব্বত আলীর সাথে সিন্ডিকেট করে শুরু করেন নানান অনিয়ম। জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন কাজ ভাগিয়ে নিতে চতুর শাহিন আলম নিজের ছোট ভাই সোহেল রানাকে প্রবাস থেকে দেশে ফেরত এনে রানা হাইটেক বিল্ডার্স নামীয় একটি ঠিকাদারী লাইসেন্স তৈরি করেন। এছাড়া তার নিকটতম আরেক আত্মীয়ের নামে শম্পা এন্টারপ্রাইজ নামক আরো একটি ঠিকাদারী লাইসেন্স তৈরি করেন। এই দুইটি লাইসেন্স নিয়ে অভিযুক্ত শাহিন আলম আওয়ামীলীগ নেতা মোহাব্বতের সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ ভাগিয়ে নেন।
লাকসাম জনস্বাস্থ্যের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শাহিন আলম ঐ কার্যালয় থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের ৩৩৫টি গভীর নলকূপ, একই অর্থ বছরের সমগ্রদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের ২০৮টি, অগ্রাধিকারমূলক গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের ২৫টি, গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ১টি, আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের ২৯৮টি ও ২০২০-২১ অর্থ বছরের সমগ্রদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আরও ২০৮টি, ৭টি পাবলিক টয়লেট, আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের ২৫৭টি, পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্পের ২৫টি, ওয়াশ ব্লক নির্মাণের ৫টি সহ মোট ১ হাজার ৩৬২টি গভীর নলকূপ স্থাপনে ভুয়া বিল ভাউচার করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও ২০২০-২১ অর্থ বছরে সমগ্রদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহের ৩৮টি, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন গভীর নলকূপ না বসিয়ে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ সকল দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে চলে আসায় শাহিন আলমকে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর শাস্তিমূলক বদলী হিসাবে তাৎক্ষনিক পঞ্চগড় জেলা কার্যালয়ে বদলী করা হয়।
লাকসাম উপজেলার জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী মো: সাইফুল ইসলাম জানান, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাফটম্যানের কাজ হচ্ছে নকশার কাজ সম্পাদন করা। এই পদবীটি ১০ম গ্রেডের। ড্রাফটম্যান পদবীটি জেলা কার্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য। এই কর্মকর্তারা উপজেলা পর্যায় আসলে সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে যোগদান করে থাকেন। ড্রাফটম্যান এবং সহকারী প্রকৌশলী একই গ্রেডের বেতন ও স্কেল ভোগ করে থাকেন।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী মো: নজরুল ইসলাম জানান, শাহিন আলম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন ড্রাফটম্যান, যাকে বলা হয় নকশাকারক। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় ২০২১ সালে চৌদ্দগ্রামে ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার ১৯৭৫ মিটারের একটি ড্রেনের কাজ তিনি তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হকের প্রভাব খাটিয়ে ভাগিয়ে নেন। কাজগুলো খুবই নি¤œ মানের হওয়ায় আমরা একাধিকবার বাধা প্রদান করেছিলাম। কিন্তু সরকারি প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিলের সিংহভাগ টাকা উত্তোলন করে কাজ শেষ না করেই পালিয়ে যান।
শাহিন আলমের যত সম্পদ:
অনুসন্ধানে শাহিন আলমের সম্পত্তির বেশ কিছু দলিল ও প্রমাণাধি এই প্রতিবেদকের হাতে আসে। অনুসন্ধান ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৮ মার্চ ১৯৭২নং দলিলে শুভপুরের তেলিহাটি মৌজায় ১০ শতক জমি ক্রয় করেন। যার বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট একই মৌজায় ১৫৫৮নং দলিলে আরও ১০ শতক জমি ক্রয় করেন। যার মূল্য ৩০ লাখ টাকা। একই সালের একই তারিখে একই মৌজায় ১৫৫৫নং দলিলে ১৬ শতক জমি ক্রয় করেন। যার বাজার মূল্য ৪৮ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ২৭ আগস্টজেলার চান্দিনা উপজেলার থানগাঁও মৌজায় দলিল নং-৭৩৭৫, ৯.৩৪ শতক ভূমি ক্রয় করেন। যার বাজার মূল্য ১ কোটি টাকার অধিক। চান্দিনা উপজেলার বেলাশর মৌজায় ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট দলিল নং- ৭৩৭৪ ও ৭৯৭৪ এর মাধ্যমে ২৫.১৪ অযুতাংশ জমি ক্রয় করেন। যার বাজার মূল্য ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এছাড়াও স্থানীয় কাদৈর বাজারে আরও ৪০ শতক ভূমি ক্রয় করেন। যার বাজার মূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়াও জেলা শহরের বাগিচাগাঁও এলাকায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ২ হাজার স্কয়ারফুটেরএকটি ফ্লাট রয়েছে তার। ঢাকার খিলগাঁওয়েরয়েছে কোটি টাকা মূল্যের আরো একটি ফ্লাট। উল্লেখিত সম্পত্তিগুলো শাহিন আলমের নিজ নামে। এছাড়াও গ্রামের বাড়ী তেলিহাটিতে ৬ শতক জায়গা কিনে প্রায় ৩কোটি টাকা ব্যয়ে নান্দনিক ডুপ্লেক্স বাড়ী তৈরি করে সে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, শাহিন আলম ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ইফাদ মটরস থেকে ৫টি বিলাসবহুল স্লিপার কোচ ক্রয় করেন। গাড়ীগুলো বর্তমানে এশিয়ান ট্রাান্সপোর্ট এর অধিনে ঢাকা আরামবাগ থেকে কক্সবাজার রোডে চলছে। প্রতিটি গাড়ীর মূল্য ২ কোটি টাকারও অধিক। গাড়ীগুলোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর যথাক্রমে- ঢাকা মেট্টো-ব-১২-২৫৮৩, ১২-২৫৮৪, ১২-২৫৮৫, ১২-২৫৮৬ ও ১২-২৫৮৭। ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে গাড়ীগুলো ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ক্রয় করা হয় এবং ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেয়ে সড়কে চলাচল শুরু করে।এছাড়াও অন্য ট্রান্সপোর্টের অধিনে আরো ৩টি স্লিপার কোচ রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গাড়ীগুলোর কাগজপত্র তার ছোট ভাই সোহেল রানার নামে করা হয়েছে। তাছাড়াও পন্য পরিবহনের জন্য ১১টি ড্রাম্প ট্রাক রয়েছে। যার বাজার মূল্য ১০ কোটি টাকা। ১৫ কোটি টাকার ১১টি স্কেভেটর (ভেকু) রয়েছে। ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের টয়োটা কোম্পানির প্রিমিও গাড়ীতে চলাফেরা করেন শাহিন আলম। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার এফডিআর করা রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে দুবাইতেও তার বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে।
অবৈধ সম্পদ রক্ষায় শাহিন আলমের অভিনব কৌশল:
নিজে সরকারের একজন সামান্য কর্মচারী হওয়ার পরেও মাত্র ৬ বছরে শত কোটি টাকার মালিক বরে যাওয়ায় সে সম্পদ রক্ষার্থে শাহিন আলম নিয়েছেন অভিনব কৌশল। ঢাকা-কক্সবাজার রোডে চলমান বিলাস বহুল ৮টি স্লিপার কোচ, ইফাদ মটরস থেকে ক্রয়কৃত অন্যান্য গাড়ীগুলো তিনি তার প্রবাস ফেরত ছোট ভাই সোহেল রানার নামে কাগজপত্র তৈরি করেন। আগামী দিনে যেন তার ছোট ভাই উক্ত সম্পদগুলো আত্মসাৎ করতে না পারে সেজন্য গোপনে নোটারি পাবলিক করে সম্পত্তিগুলো ছোট ভাই থেকে তার নামে লিখে নেন। একই কায়দায় তিনি পালিত বড় ভাই মনির, রফিক, প্রথম স্ত্রী তাসলিমা ও দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা মজুমদার লিমার নামে সম্পদ ক্রয় করে তাদের কাছ থেকেও নোটারি পাবলিক করে নেন। সম্পদ গোপন করলেও ঠিকাদারী লাইসেন্স এর আর্থিকলেনদেন করা হয় এনআরবিসি ব্যাংকের কুমিল্লা ময়নামতি শাখায়। টাকা উত্তোলনের সময় চেকগুলোতে শাহিন আলম নিজেই স্বাক্ষর করেন বলে জানা গেছে।শাহিন আলমের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আরমান মিয়া নামে এক ব্যক্তি বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে শাহিন আলমের বিরুদ্ধে একই বছরের ১৮ নভেম্বর ঢাকা যাত্রাবাড়ী থানায় একই এলাকার মীরহাজীরবাগের বাসিন্দা বাবুল মিয়া নামে এক ব্যক্তি হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকেও আসামী করা হয়। যার মামলা নং- ৪৫, তাং- ১৮/১১/২০২৪ইং।
জনস্বাস্থ্যের ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল হক বলেন, শাহিন আলম ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ড্রাফটম্যান হিসাবে যোগদান করেন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তিনি বদলী হয়ে ফেনীতে ড্রাফটম্যান হিসাবে যোগদান করেন। বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সেই মামলার তদন্ত চলছে।
এই বিষয়ে শাহিন আলমের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সম্পদ ও অনিয়মের বিষয়েপ্রশ্ন করা হলে, তিনি এই প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, এখন আমাকে কি করবে? তাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলে তিনি বলেন, আপনাকে কিছু টাকা দিয়ে দেই?না হয় আপনার মন যা চায় আমার বিরুদ্ধে তা লিখে দেন।
সনাক এর কুমিল্লা সভাপতি অধ্যাপক নিখিল চন্দ্র রায় বলেন, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ড্রাফটম্যান মাত্র ৬ বছরে কিভাবে এতো কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, বিষয়টি সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন এর খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তিনি যদি অনিয়ম করে এই অবৈধ সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে সরকার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

লাকসামে শ্বশুরকে হত্যার দায়ে পুত্রবধূর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
নিজস্ব প্রতিবেদককুমিল্লার লাকসামে পুত্রবধূকে পরকীয়া প্রেম বাঁধা দেওয়ায় ধারালো ছুরি বুকে আঘাত ও ব্লেড...

কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন মামলায় শিক্ষকসহ গ্র...
নিজস্ব প্রতিবেদক কুমিল্লায় জুলাই বিপ্লবে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান - বৈষম্...

মুরাদনগরে মাদক সম্রাট সোহেলকে ইয়াবাসহ ধরে পুলিশে দিল গ্রামব...
বেলাল উদ্দিন আহাম্মদকুমিল্লার মুরাদনগরে সোহেল মিয়া নামের এক মাদক সম্রাট ও তার সহযোগীকে ইয়াবাসহ ধরে প...

বুড়িচংয়ে বিষ প্রয়োগ ও এসিড ঢেলে শিশু হোসাইন হত্যার ঘটনায় দু...
কাজী খোরশেদ আলমকুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামে বিষ প্রয়োগ ও এসিড ঢেলে ১৪ বছর...

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টার মামলায় যুবলীগ নেতা...
মোঃ মাসুদ রানা, দেবিদ্বার কুমিল্লার দেবীদ্বারে গত বছর ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকাল...

ব্রাহ্মণপাড়ায় রাস্তা দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযো...
মোঃ আবদুল আলীম খানকুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় রাস্তা দখল করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। উপজেল...
